ড. ইউনুসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে নতুন এক ধরনের রাজনৈতিক বাস্তবতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আশা ছিল। কিন্তু বিগত চার মাসের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সমমনা মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলোর পুনরুত্থান শুধু বর্তমান পরিস্থিতিকেই অস্থির করছে না, এটি ভবিষ্যতের গণতন্ত্র ও সমাজের মৌলিক কাঠামোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে। ড. ইউনুসের সরকারের শুরুর দিকে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল, তা এসব গোষ্ঠী কাজে লাগিয়েছে। তারা একদিকে ধর্মীয় বিভেদের মাধ্যমে সমাজে বিভক্তি তৈরি করছে, অন্যদিকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার পর আবার সংগঠিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সমমনা অন্যান্য গোষ্ঠীও নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
নারী অধিকার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার হুমকি
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো নারী অধিকারের ওপর আঘাত হানতে সবসময়ই সচেষ্ট। ইতিমধ্যে কিছু অঞ্চলে নারীদের পোশাক, কর্মস্থল এবং শিক্ষার অধিকার নিয়ে কড়া বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রার জন্য বড় ধরনের হুমকি। যদি এই গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পায়, তাহলে নারীর জন্য শিক্ষার সুযোগ সীমিত হতে পারে, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়তে পারে এবং পরিবার ও সমাজে তাদের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা গণতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার পরিপন্থী। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। এসব গোষ্ঠীর পুনরুত্থান হলে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুর্বল হবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাপে পড়বে, এবং মানুষের মৌলিক অধিকার হুমকির মুখে পড়বে।
সমাধানের পথ
১. রাজনৈতিক ঐক্য: দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে দলমত ভুলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক ঐক্যই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
২. শিক্ষার বিস্তার: তরুণ প্রজন্মকে মৌলবাদী মতাদর্শ থেকে দূরে রাখতে শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৩. আইনশৃঙ্খলা রক্ষা: সরকারের উচিত কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা দমন করা।
৪. নারী অধিকার রক্ষা: নারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় সময় পার করছে। ড. ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা দেশকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গণতন্ত্র, নারীর অধিকার এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায়, আমাদের যে অর্জনগুলো নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি অন্ধকারময় সময় রেখে যাব।