বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস।

  • আপডেটের সময়: বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ১১৩ সময় দেখুন

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে, পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। যদিও ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনধারা ও চাহিদায় পূর্ব পাকিস্তান ছিল ভিন্ন, তবুও পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্বাঞ্চলের ওপর শোষণ ও বৈষম্য শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পূর্ব বাংলার মানুষ তীব্র প্রতিবাদ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে পুলিশ গুলি চালিয়ে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেককে শহীদ করে। এর ফলে বাংলা ভাষার অধিকার আদায় হয় এবং জাতির মধ্যে স্বাধীনতার বীজ বপিত হয়।

পূর্ব পাকিস্তান জনসংখ্যায় বেশি হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতায় পশ্চিম পাকিস্তান আধিপত্য করত। অর্থনৈতিকভাবে পূর্বাঞ্চল আয় করলেও অবকাঠামো, শিক্ষা ও উন্নয়নে উপেক্ষিত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং মুজিবসহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়ে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আলোচনা বিলম্বিত করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, তিনি বলেন “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম — এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার” আহ্বান জানান।

২৫ মার্চ ১৯৭১, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকায় গণহত্যা চালায়। বহু মানুষ হত্যা করা হয়। ২৬ মার্চ ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জিত হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো হঠাৎ প্রাপ্তি নয়, এটি একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক চেতনা ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফল। এটি জাতির আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। আজও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের পথে।

Author

এই বিভাগের আরও খবর