বাংলাদেশে সেনা শাসনের ইতিহাস

  • আপডেটের সময়: শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫
  • ২০০ সময় দেখুন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনা শাসনের একটি নেতিবাচক অধ্যায় রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সামরিক বাহিনী সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সাধারণত, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও শাসন ব্যবস্থার ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে।

১৯৭৫ সালের সেনা অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমানের উত্থানের পথ সম্প্রসারিত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। এরপর কয়েকটি পাল্টা অভ্যুত্থান হয়, যার মধ্যে ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হন এবং সামরিক শাসন জারি করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) গঠন করেন এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে তিনি নিহত হন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন জারি করেন। এরশাদ ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি (জাপা) গঠন করেন এবং পরে নির্বাচনেও জয়ী হন। দীর্ঘ নয় বছর শাসনের পর, ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

২০০৬ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের ফলে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করে, যা “ওয়ান ইলেভেন” সংকট নামে অনেক পরিচিত। দুই বছরের শাসন শেষে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে সেনা শাসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সামরিক শাসনকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। সামরিক শাসনের ফলে বাংলাদেশে বারবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিঘ্ন ঘটেছে এবং সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। সেনা শাসন কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। গণতান্ত্রিক শাসন ও সুশাসন দেশের স্থায়ী সমৃদ্ধির পথ প্রসারিত করে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনা শাসন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দুটি বড় সেনা শাসনের কারণে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেনা শাসকেরা কখনো সংবিধান স্থগিত করেছে, কখনো কখনো নিজের মতো করে সংবিধান সংশোধন করেছে। নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যাক্তিগত স্বার্থে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর ক্ষমতা দখল করেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি সেনাবাহিনীর সহায়তায় সরকার পরিচালনা করেন। পরবর্তী সময়ে, একই বছরের ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর দুটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদল ঘটে। অবশেষে, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর শাসনামলে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় চালু হয় এবং ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে দিয়ে সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি সামরিক শাসন জারি করেন এবং ১৯৮৩ সালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
এরশাদের শাসনামলে সংবিধান সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয় এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়। তবে তার শাসনামলে স্বৈরতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন ক্রমেই তীব্র হয় এবং ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সামরিক শাসনের সময় জনগণের ভোটাধিকার সংকুচিত হয়ে যায়। সাময়িক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও স্বৈরতন্ত্রের কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেনা শাসন একটি বিতর্কিত অধ্যায়। সামরিক শাসন গণতন্ত্র হত্যা করে, জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার ও মানবধিকার সংকোচিত করে। রাষ্টের জনগণ একটি ভয়ের শোষণের মধ্যে দিয়ে তাঁর নাগরিক জীবন অতিবাহিত করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (রাত ৮:৩১)