মুন্সীগঞ্জ, ঐতিহাসিকভাবে বিক্রমপুর নামে পরিচিত, বাংলাদেশের ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এ জেলা ঢাকা বিভাগের অংশ,বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থানশীল। এ জেলার আয়তন প্রায় ৯৫৫ কিমি (২৩৫,৯৭৪ একর), যার মধ্যে ৫৬০ কিমি আবাদী ভূমি এবং নদীর বুক ১০৬ কিমি জুড়ে বিস্তৃত। ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ১৬.২৫ লক্ষ, জনঘনত্ব প্রায় ১,৭০০/কিমি। প্রশাসনিকভাবে এতে ৬টি উপজেলা (লোহাজাঙ্গ, শ্রীনগর, মিরিকাদিম সদর, সিরাজদিখান, টঙ্গিবাড়ি, গাজারিয়া) রয়েছে।
মধ্যযুগে এই অঞ্চল ছিল বিক্রমপুর, যা ১০–১৩ শতকে সেন রাজবংশের যুগে প্রাচীন বাংলা সাম্রাজ্যের মেরুদণ্ড ছিল মুঘল আমলে ‘ইদ্রাকপুর’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ফৌজদার মুন্সী হায়দার হোসেনের নামে নামকরণ হয়ে ‘মুন্সীগঞ্জ’ বলা শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে ১৯৪৫ সালে থানায় উন্নীত হয় এবং ১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণা করা হয়।
এ জেলার প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। প্রতি বছর ধলেশ্বরী নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়, যেটি হাজার হাজার দর্শক আকর্ষণ করে। এ জেলায় ইদ্রাকপুর দুর্গ অবস্থিত, ১৬৬০ সালে নির্মিত মুঘল যুগের নদীবক্ষে কেল্লা, যা ডাহুক-পাইরেট আক্রমণ রোধে ব্যবহৃত হতো।
নাটেশ্বর দেউল মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ প্রত্ন-নিবাস, যা ৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২২৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিক্রমপুর অঞ্চলে শাসনকালে গড়ে উঠেছিল। বিক্রমপুর বিহার, যা রঘুরামপুর (রামপাল ইউনিয়ন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায়) অবস্থিত, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন বৌদ্ধ শিক্ষা ও ধর্মীয় কেন্দ্র। বাবা আদমের মসজিদ, মুন্সীগঞ্জ জেলার রামপাল (কাজী কসবা, রিকাবিবাজার ইউনিয়ন) গ্রামের একটি ঐতিহাসিক সুলতানি যুগের মসজিদ, যা বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন রক্ষিত প্রত্ন নিদর্শন। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন।