ঐতিহ্যবাহী ব্রিক লেন রক্ষায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাফল্য: ট্রুম্যান ব্রিউয়ারির বিতর্কিত উন্নয়ন প্রস্তাব খারিজ করেছে কাউন্সিল I

  • আপডেটের সময়: রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫
  • ৮৩ সময় দেখুন
আব্দুল হান্নান
আব্দুল হান্নান

স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ব্রিক লেন সংলগ্ন ট্রুম্যান ব্রিউয়ারি এস্টেটের তিনটি বিতর্কিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। গত বৃহস্পতিবার (৩১ই জুলাই ২০২৫) এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় কাউন্সিলররা এই সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই লড়াই এখনও শেষ হয়নি, কারণ প্রকল্পগুলোর চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারিত হবে অক্টোবরে সরকারের প্ল্যানিং ইনস্পেক্টরেটের শুনানিতে।

ট্রুম্যান ব্রিউয়ারির মালিকপক্ষ ব্রিক লেন, ইলি’স ইয়ার্ড এবং গ্রে ঈগল স্ট্রিটে তিনটি বড় পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি ছিল ব্রিক লেন ও স্পিটাল স্ট্রিটের মাঝে অবস্থিত। এই পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি পুরনো ভবন এবং একটি ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ ভেঙে ফেলার কথা ছিল। এর পরিবর্তে পাঁচটি নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়, যেখানে অফিস, একটি সুপারমার্কেট, রেস্তোরাঁ, সিনেমাহল এবং ৪৪টি নতুন ফ্ল্যাট তৈরি হতো। তবে এর মধ্যে মাত্র ছয়টি ফ্ল্যাট সাশ্রয়ী ভাড়ায় (affordable rent) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, যা সম্প্রদায়ের প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। ইতিবাচক দিক হিসেবে, ঐতিহাসিক বয়লার হাউস ও কুপারেজ ভবন দুটি সংস্কার করে ইভেন্ট স্পেস এবং একটি মাইক্রোব্রিউয়ারি হিসেবে অক্ষত রাখার কথা বলা হয়েছিল।

সভার শুরু থেকেই এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন স্থানীয়রা। বেঙ্গলি ইস্ট এন্ড হেরিটেজ সোসাইটির সইফ ওসমানী এই প্রস্তাবকে “একটি নিষ্প্রাণ, কৃত্রিম শহরের দৃশ্যপটের মতো, যা যেন কোনও AI তৈরি করেছে” বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “ব্রিক লেনকে অনুকরণ করা যায় না। হুগোনট, আইরিশ, কৃষ্ণাঙ্গ, ইহুদি, বাংলাদেশি ও সোমালি—সকল সম্প্রদায়ের অবদানে এই এলাকা জীবন্ত। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ভাড়া ও জেনট্রিফিকেশন সেই প্রাণবন্ত সংস্কৃতিকেই আজ বিপন্ন করে তুলেছে।” ব্রিক লেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফয়সাল আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মাত্র ছয়টি সামাজিক বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমাদের সবার মুখে চপেটাঘাত।আশ্চর্যজনকভাবে, কাউন্সিলের পরিকল্পনা কর্মকর্তারা প্রকল্পটিকে সমর্থনের সুপারিশ করেছিলেন। তাদের মতে, যদিও এই পরিকল্পনা এলাকার চিরাচরিত রূপ ও মনোহারিত্বের কিছুটা ক্ষয় ঘটাবে, তথাপি এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলো সেই সীমাবদ্ধতাকে ম্লান করে দেবে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিটির নির্বাচিত কাউন্সিলররা এই যুক্তির সঙ্গে একমত হননি।

কমিটির চেয়ারম্যান আমিন রহমান জানান, একাধিক জোরালো কারণে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করা উচিত। কারণগুলো হলো: ঐতিহ্যগত ক্ষতি: এলাকার ঐতিহাসিক প্রকৃতি নষ্ট হবে। অপর্যাপ্ত সাশ্রয়ী আবাসন: মাত্র ৬টি সাশ্রয়ী ফ্ল্যাট প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।স্থানীয় ব্যবসায় ক্ষতি: নতুন উন্নয়নের ফলে ছোট ও স্থানীয় ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এলাকার বহু শতাব্দীর পুরাতন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আঞ্চলিক পরিচয়কে এই পরিকল্পনায় উপেক্ষা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, কমিটি সর্বসম্মতভাবে ইলি’স ইয়ার্ডে প্রস্তাবিত ছয়তলা অফিস ভবন এবং গ্রে ঈগল স্ট্রিটের ডেটা সেন্টার প্রকল্পও বাতিল করে দেয়।

সাধারণত কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হতো। কিন্তু ডেভেলপার ‘ট্রুম্যান এস্টেটস’ আগেই একটি আপিল করে রেখেছে। তাদের যুক্তি, কাউন্সিল সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় এখন চূড়ান্ত রায় দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের প্ল্যানিং ইনস্পেক্টরেটের হাতে। ফলে, অক্টোবরে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে যেখানে উভয় পক্ষ নিজ নিজ যুক্তি তুলে ধরবে। কাউন্সিলের বৃহস্পতিবারের এই প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তটিই হবে শুনানিতে তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান এবং প্রধানযুক্তি। উল্লেখ্য, এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় ট্রুম্যান এস্টেটসের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে তাদের প্রকল্পের পক্ষে কোনও যুক্তি উপস্থাপন করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৬:২১)